পোস্টগুলি

বাড়িতে মাশরুম চাষ করে মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা আয় খুব সহজে - Mushroom Cultivated at Home.

 বর্তমান সময়ে বেকারত্বের সমস্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। অনেকে ব্যবসা শুরু করার জন্য চেষ্টা করেন, কিন্তু বড় মূলধন, জমি বা আলাদা দোকান না থাকায় অনেকে পিছিয়ে যান। এমন পরিস্থিতিতে মাশরুম চাষ হতে পারে একটি সহজ, সাশ্রয়ী এবং লাভজনক উপায়। কারণ এই চাষের জন্য খুব বেশি জমি বা বড়সড় খরচের প্রয়োজন হয় না। অল্প জায়গায়, অল্প মূলধনে এবং সামান্য পরিশ্রমে নিয়মিত আয়ের সুযোগ তৈরি করা যায়। সঠিকভাবে যত্ন নিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করলে মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।

মাশরুম চাষের উপযোগিতা

মাশরুম একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রোটিন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস এবং বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান বিদ্যমান থাকে। মাশরুমকে অনেকেই "ভেজিটেরিয়ান মিট" বলে থাকেন কারণ এতে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একদিকে যেমন পুষ্টির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, অন্যদিকে ডাক্তার, পুষ্টিবিদ এবং ডায়েটিশিয়ানরাও মাশরুম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এর ফলে বাজারে এর গ্রহণযোগ্যতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি মাশরুম চাষে খরচ কম এবং ঝুঁকি কম। সাধারণত অন্যান্য শাকসবজি চাষের ক্ষেত্রে জমি, সার, কীটনাশক প্রয়োজন হয়। কিন্তু মাশরুম চাষে এগুলোর প্রয়োজন পড়ে না। এটি একেবারেই ভিন্ন পদ্ধতিতে, নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে উৎপাদিত হয়। তাই এটি বাড়ির ভেতরে, বারান্দা বা খালি কোনো ঘরেই চাষ করা যায়।

চাষ শুরু করার জন্য যা যা প্রয়োজন

মাশরুম চাষের জন্য প্রয়োজন একটি অন্ধকার এবং আর্দ্র জায়গা। খুব বেশি আলো প্রবেশ করলে সমস্যা হয় না, তবে সরাসরি রোদ পড়া উচিত নয়। তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে ভালো ফলন হয়। এছাড়া আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত পানি ছিটাতে হয়।

চাষের জন্য প্রধান উপকরণ হলো স্পন, অর্থাৎ মাশরুমের বীজ। স্পন মিশিয়ে খড় বা অন্য উপযুক্ত মাধ্যম ব্যাগে ভরে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা হয়। কিছুদিন পর সেই ব্যাগ থেকে ছোট ছোট মাশরুম বের হতে শুরু করে। সাধারণত ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে প্রথম ব্যাচ সংগ্রহ করা যায়। একেকটি ব্যাগ থেকে প্রায় ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত মাশরুম উৎপাদিত হতে পারে। সঠিক যত্নে একবার ব্যাগ ভরলে তিন থেকে চারবার পর্যন্ত ফসল তোলা সম্ভব।

আয়-ব্যয়ের হিসাব

মাশরুম চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর খরচ খুবই সীমিত। একটি ছোট ঘরে যদি ১০০টি ব্যাগ দিয়ে চাষ শুরু করা হয়, তাহলে প্রাথমিক খরচ পড়ে প্রায় ৮-১০ হাজার টাকা। এই খরচের মধ্যে স্পন, খড়, প্লাস্টিক ব্যাগ, তাক বানানোর খরচ এবং প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক খরচ চলে আসে। এক মাসের মধ্যে এই ১০০ ব্যাগ থেকে গড়ে ৮০-১০০ কেজি মাশরুম পাওয়া যায়।

বর্তমানে বাজারে মাশরুমের দাম প্রতি কেজি গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। সেই হিসেবে এক মাসে ১৬ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা সম্ভব। খরচ বাদ দিলে মাসিক আয় দাঁড়ায় ১২ থেকে ২০ হাজার টাকার মতো। যদি এর পরিমাণ বাড়িয়ে ২০০ বা ৩০০ ব্যাগে চাষ করা হয়, তাহলে মাসে ৩০ হাজার টাকা বা তারও বেশি আয় করা যায়। নিয়মিত চাষ বজায় রাখলে এই আয় সারা বছর অব্যাহত রাখা সম্ভব।

বিক্রির ব্যবস্থা

মাশরুম বিক্রির ক্ষেত্রেও বেশি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় না। স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা সবসময় থাকে। সকালে টাটকা মাশরুম নিয়ে বাজারে গেলে সহজেই বিক্রি হয়ে যায়। এছাড়া হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ক্যান্টিন বা ক্যাটারিং সার্ভিসে নিয়মিত মাশরুমের প্রয়োজন হয়। যারা বড় পরিমাণে চাষ করেন তারা সরাসরি হোটেল বা রেস্টুরেন্টের সাথে চুক্তি করে নিয়মিত সরবরাহ করে ভালো আয় করতে পারেন।

বড় শহরে সুপার মার্কেট, মল বা অর্গানিক ফুড স্টোরে মাশরুমের বিক্রি হয়। সঠিক প্যাকেটজাত করে সেখানে সরবরাহ করা যায়। এছাড়া অনলাইন মাধ্যমেও বিক্রির ভালো সুযোগ আছে। বর্তমানে অনেকেই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদির মাধ্যমে মাশরুম বিক্রি করছেন। ফলে স্থানীয়ভাবে বা ঘরে বসেই ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করা সম্ভব।

সরকারি কৃষি দপ্তর এবং সমবায় সমিতির মাধ্যমেও বিক্রির সুযোগ পাওয়া যায়। অনেক জায়গায় সমবায় সমিতি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে মাশরুম কিনে নেয় এবং বড় বাজারে বিক্রি করে।

চাষে সফলতার মূলমন্ত্র

মাশরুম চাষে সফল হতে হলে কয়েকটি বিষয় মেনে চলা প্রয়োজন। নিয়মিতভাবে আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে, যাতে ব্যাগ শুকিয়ে না যায়। স্পন মেশানোর সময় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি, না হলে সংক্রমণের কারণে ফলন নষ্ট হতে পারে। যেহেতু এটি একটি নিয়ন্ত্রিত চাষ, তাই তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার ভারসাম্য রক্ষা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

শুরুতে অয়েস্টার মাশরুম দিয়ে শুরু করা ভালো কারণ এটি সহজে উৎপাদিত হয় এবং ফলনও দ্রুত আসে। অভিজ্ঞতা অর্জনের পর চাইলে বাটন মাশরুম বা অন্য প্রজাতির মাশরুম চাষ করা যায়। এগুলোর বাজারদর তুলনামূলক বেশি, ফলে লাভও বেশি হয়।

মাশরুম চাষ হলো এমন একটি ব্যবসা যেখানে ঝুঁকি কম, খরচ কম, কিন্তু লাভের সম্ভাবনা বেশি। বাড়ির অল্প জায়গা ব্যবহার করেই নিয়মিত আয় করা সম্ভব। এই ব্যবসায় সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বাজারে এর চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে এবং আগামী দিনে আরও বাড়বে। তাই যারা নতুন ব্যবসা শুরু করতে চান, অথবা বাড়িতে বসে আয়ের ব্যবস্থা খুঁজছেন, তাদের জন্য মাশরুম চাষ একটি দারুণ সুযোগ। নিয়মিত যত্ন ও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা আয় করা বাস্তবেই সম্ভব।

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.