ভারতের মতো দেশে এখনো অনেক পরিবার আছে যেখানে গরীব মানুষ প্রতিদিনের খরচ চালাতেই হিমশিম খায়। সন্তানদের পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করা তাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে একটি মেয়ে সন্তান থাকলে বাবা-মার দুশ্চিন্তা আরও বাড়ে। সেই সমস্যার সমাধান করতে সরকার সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা চালু করেছে। এই স্কিমটি পোস্ট অফিসে খুব সহজে খোলা যায় এবং অল্প টাকায় শুরু করা যায়।
কেন এই স্কিম এত গুরুত্বপূর্ণ?
১. গরীব পরিবারের জন্য বড় ভরসা
একজন বাবা বা মা যদি প্রতিদিন একটু একটু করে সঞ্চয় করতে পারেন, তবে কয়েক বছরের মধ্যে সেই টাকাটা বড় অঙ্কে পরিণত হবে। গরীব পরিবারগুলোর জন্য এটা যেন ভবিষ্যতের ভরসার আলো।
২. শিক্ষা ও বিয়ের খরচের নিশ্চয়তা
আজকের দিনে মেয়েদের পড়াশোনা করা খুব জরুরি। কিন্তু গরীব পরিবারে প্রায়ই টাকা না থাকার কারণে মেয়েরা মাঝপথেই পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। এই স্কিমে বিনিয়োগ করলে ১৮ বছর বয়সের পর মেয়ের পড়াশোনার জন্য টাকা তোলা যায়, আর ২১ বছরে পুরো টাকা তোলা যায়—যা বিয়ের জন্যও ব্যবহার করা যায়।
৩. সরকারের সুরক্ষা
এটি সম্পূর্ণভাবে ভারত সরকারের স্কিম, তাই এখানে কোনো ঝুঁকি নেই। টাকা একেবারেই সুরক্ষিত থাকে এবং সুদও অনেক বেশি দেওয়া হয়।
কীভাবে এই স্কিম কাজ করে?
- অ্যাকাউন্ট খোলার বয়স: ০ থেকে ১০ বছরের মধ্যে মেয়ের নামে এই অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।
- ন্যূনতম টাকা: বছরে মাত্র ২৫০ টাকা জমা দিলেই অ্যাকাউন্ট চালু থাকবে।
- সর্বোচ্চ টাকা: বছরে সর্বোচ্চ ১.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা করা যাবে।
- সুদ হার: সরকার প্রতি বছর সুদের হার ঘোষণা করে, যা সাধারণত ৭% থেকে ৮% এর বেশি থাকে—যা অন্য কোনো সেভিংস স্কিমের তুলনায় অনেক ভালো।
- অ্যাকাউন্ট চালু থাকার সময়: মেয়ের বয়স ২১ বছর না হওয়া পর্যন্ত। তবে ১৫ বছর জমা দিলেই পরের সময় আর টাকা দেওয়া লাগবে না, টাকা সুদে সুদে বাড়তে থাকবে।
সাধারণ মানুষের জন্য কতটা লাভজনক?
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক:
যদি কোনো বাবা প্রতি মাসে ১,০০০ টাকা এই অ্যাকাউন্টে জমা করেন (মানে বছরে ১২,০০০ টাকা), তাহলে ২১ বছরে সেই টাকা দাঁড়াবে প্রায় ৬ লাখ টাকারও বেশি।
যদি মাসে ২,০০০ টাকা জমা করা হয়, তাহলে মেয়ের ২১ বছর বয়সে টাকা দাঁড়াবে প্রায় ১২ লাখ টাকার মতো।
এই টাকা দিয়ে সহজেই উচ্চশিক্ষার খরচ বা বিয়ের খরচ সামলানো যায়।
গরীব মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনে কীভাবে?
১. ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা কমে যায়
গরীব পরিবারের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হলো—সন্তানের পড়াশোনা ও বিয়ের খরচ। এই স্কিম থাকলে সেই দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যায়।
২. সঞ্চয়ের অভ্যাস তৈরি হয়
অনেক গরীব মানুষ প্রতিদিনের খরচ সামলাতে গিয়ে কোনো সঞ্চয়ই করতে পারেন না। কিন্তু এই স্কিমে ছোট অঙ্কের টাকা জমা করেও বড় অঙ্ক তৈরি হয়। এর ফলে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে ওঠে।
৩. মেয়েদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ
এই স্কিম কেবল অর্থ নয়, মানসিক সুরক্ষাও দেয়। বাবা-মা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন যে মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য একটা শক্ত ভরসা তৈরি হয়েছে।
বড় বড় টাইটেল সহ সহজ ব্যাখ্যা
ন্যূনতম টাকায় সর্বোচ্চ সঞ্চয়
মাত্র ২৫০ টাকা দিয়ে শুরু করা যায়। এত কম টাকায় আর কোনো সরকারি স্কিম নেই যা এত বড় নিরাপত্তা দেয়।
ঝুঁকি একেবারেই নেই
যেহেতু এটি সরকার পরিচালিত, তাই এখানে টাকা হারানোর কোনো ভয় নেই।
কর ছাড়ের সুবিধা
এই স্কিমে টাকা জমা করলে আয়করেও ছাড় পাওয়া যায় (Income Tax Act 80C অনুযায়ী)।
১৮ বছর পর আংশিক টাকা তোলার সুবিধা
মেয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য কিছু টাকা তোলার সুযোগ আছে। এতে বাবা-মা পড়াশোনার খরচ চালাতে পারেন।
২১ বছরে পুরো টাকা
মেয়ের ২১ বছর হলে বা বিয়ে হলে পুরো টাকা তুলে নেওয়া যায়।
কেন একে সবচেয়ে জরুরি বলা হচ্ছে?
কারণ গরীব পরিবারের কাছে সামান্য সঞ্চয়ই বড় শক্তি। ব্যাংক বা প্রাইভেট কোম্পানির স্কিমে অনেক ঝুঁকি থাকে, আবার অনেক জায়গায় বেশি টাকার দরকার হয়। কিন্তু পোস্ট অফিসের এই সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা খুব কম টাকায় শুরু করা যায় এবং নিশ্চিত লাভ পাওয়া যায়।
একজন বাবা-মা যদি মাসে সামান্য টাকা আলাদা করতে পারেন, তবে মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। এ কারণেই এই স্কিমকে গরীব মানুষের জন্য সবচেয়ে অত্যন্ত জরুরি স্কিম বলা হচ্ছে।
আজকের দিনে শিক্ষা ও বিয়ের খরচ খুব বেশি বেড়ে গেছে। বিশেষ করে গরীব পরিবারগুলোর জন্য এই খরচ মেটানো প্রায় অসম্ভব। কিন্তু পোস্ট অফিসের সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা তাদের সেই স্বপ্ন পূরণের শক্তি দেয়।
একটু একটু করে সঞ্চয় করলে কয়েক বছরের মধ্যে মেয়ের জন্য বড় অঙ্কের টাকা তৈরি হয়। এটি শুধু একটি সঞ্চয় স্কিম নয়, বরং একটি নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি।
তাই প্রতিটি গরীব পরিবারের জন্য এই স্কিমে যোগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। মেয়ের জন্মের পরই বাবা-মা যদি এই অ্যাকাউন্ট খুলে দেন, তবে ভবিষ্যৎ অনেকটাই নিশ্চিন্ত থাকবে।