বর্তমানে গ্রামে বা শহরের পাশে ছোট জায়গায় দেশি মুরগির খামার শুরু করে ভালো আয় করা সম্ভব। দেশি মুরগির মাংস ও ডিম বাজারে অনেক দামে বিক্রি হয়, কারণ এগুলো স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু। সঠিক পরিকল্পনা ও যত্ন নিলে এই ব্যবসা থেকে মাসে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় করা কোনো কঠিন বিষয় নয়।
১. জায়গা নির্বাচন ও খামার তৈরী
- জায়গা: ২০০–৫০০ বর্গফুট জায়গা থাকলেই শুরু করা যায়।
- শেড/খামার: বাঁশ, কাঠ বা টিন দিয়ে ছাউনি বানিয়ে ভালোভাবে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- তাপমাত্রা: শীত ও গরমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
২. দেশি মুরগির জাত নির্বাচন
দেশি মুরগির বিভিন্ন জাত আছে, যেমন —
- দেশি লেয়ার (ডিমের জন্য ভালো)
- দেশি ব্রয়লার বা গিরিরাজ (মাংসের জন্য ভালো)
- দেশি দেশি-মুরগি হাইব্রিড (ডিম ও মাংস দুইয়ের জন্যই)
৩. খামার শুরু করার জন্য পুঁজি
- মুরগি কিনতে: ১০০–২০০টি ছানা দিয়ে শুরু করতে পারেন। প্রতিটি ছানার দাম ৩০–৫০ টাকা।
- খাবার ও ওষুধ: প্রতি মাসে প্রতিটি মুরগির জন্য ৫০–৬০ টাকা হিসেবে খরচ হবে।
- মোট প্রাথমিক খরচ: ৫০ হাজার – ৮০ হাজার টাকার মধ্যে।
৪. খাবার ও যত্ন
- দেশি মুরগি ধান, ভুট্টা, গম, দানাদার খাবার, কচি ঘাস, পোকা ইত্যাদি খায়।
- বাজারে প্রস্তুত খাবারও (Poultry Feed) ব্যবহার করা যায়।
- সবসময় পরিষ্কার পানি ও খাবার দিতে হবে।
- নিয়মিত টিকা দিতে হবে (Ranikhet, Fowl Pox ইত্যাদি রোগের জন্য)।
৫. আয় কিভাবে হবে?
ডিম বিক্রি থেকে আয়
- একটি দেশি মুরগি বছরে ১৩০–১৫০টি ডিম দেয়।
- বাজারে একটি দেশি ডিমের দাম ১০–১২ টাকা।
- ২০০ মুরগি থাকলে মাসে গড়ে ২০,০০০–২৫,০০০ টাকা শুধু ডিম বিক্রি থেকে আয় হবে।
মাংস বিক্রি থেকে আয়
- ৪–৫ মাস পর প্রতিটি মুরগির ওজন হয় ১.৫–২ কেজি।
- দেশি মুরগির মাংসের দাম কেজি প্রতি ৪৫০–৫৫০ টাকা।
- মাসে যদি ৫০–৬০টি মুরগি বিক্রি করেন, তাহলে ৩০,০০০–৫০,০০০ টাকা আয় হবে।
৬. মাসিক সম্ভাব্য আয়
- ডিম + মাংস বিক্রি মিলিয়ে: মাসে প্রায় ৫০,০০০ – ১,০০,০০০ টাকা আয় সম্ভব।
- খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকবে প্রায় ৩০,০০০ – ৭০,০০০ টাকা, নির্ভর করবে উৎপাদন ও বাজারদরের উপর।
৭. অতিরিক্ত আয় করার উপায়
- মুরগির বিষ্ঠা জৈব সার হিসেবে বিক্রি করা।
- খামারের ডিম থেকে ছানা ফোটানোর মেশিন (হ্যাচারি) ব্যবহার করে ছানা বিক্রি করা।
৮. গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- বাজার ও ক্রেতা আগে থেকেই ঠিক করে নিন।
- নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
- রোগ হলে দ্রুত পশু-চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- খাবারে কখনোই পানি বা মানহীন উপাদান মেশাবেন না।
দেশি মুরগির চাহিদা সবসময় থাকে। সঠিক যত্ন ও পরিকল্পনা থাকলে এই ব্যবসা আপনাকে স্বল্প সময়ে ভালো আয়ের সুযোগ করে দেবে। শুরুতে ছোট করে শুরু করুন, পরে ধীরে ধীরে বাড়ান।