একটু বুদ্ধি খাটিয়ে ও পরিশ্রম করে মাসে ৫০,০০০ টাকা বা তারও বেশি আয় করা সম্ভব। চলুন ধাপে ধাপে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে মাটির চা কাপ বানিয়ে ভালো রোজগার করা যায়।
১. ব্যবসার প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা
👉 চা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। প্রতি দিন কোটি কোটি মানুষ চা খান এবং প্রতিটি চায়ের দোকানে কাপ লাগে। আগে বেশিরভাগ দোকানে প্লাস্টিক বা কাগজের কাপ ব্যবহার হতো, কিন্তু এখন পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে মাটির কাপের চাহিদা বাড়ছে।
👉 বড় বড় হোটেল, রেস্তোরাঁ, রেলওয়ে স্টেশন এমনকি বিয়ে-শাদি বা অনুষ্ঠানে মাটির কুলহড়ে চা পরিবেশন এখন ট্রেন্ড।
👉 সরকারের তরফ থেকেও প্লাস্টিক ব্যবহার কমানোর প্রচেষ্টা চলছে। ফলে আগামী দিনে মাটির কাপের বাজার আরও বিস্তৃত হবে।
অতএব, এখনই এই ব্যবসা শুরু করার সেরা সময়।
২. কত টাকায় ব্যবসা শুরু করবেন
মাটির কাপ তৈরির জন্য খুব বড় মূলধন লাগে না।
- কাঁচামাল: মাটি (Local supplier থেকে খুব কম দামে পাওয়া যায়)
- যন্ত্রপাতি: ছোট স্কেলে শুরু করতে চাইলে হ্যান্ডমেড বা ছোট ইলেকট্রিক চাক কিনতে হবে (₹১৫,০০০ – ₹৩০,০০০)
- ভাঁটা (চুল্লি): মাটি পোড়ানোর জন্য কিলন বা ভাঁটা দরকার হবে (₹২৫,০০০ – ₹৫০,০০০)
- অন্যান্য খরচ: শুকানোর জায়গা, প্যাকেজিং, ট্রান্সপোর্ট ইত্যাদি (₹১০,০০০ – ₹১৫,০০০)
👉 সব মিলিয়ে প্রথমে ₹৬০,০০০ – ₹১,০০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করলেই ছোট স্কেলে ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
৩. আয় ও লাভের হিসাব
ধরা যাক আপনি প্রতিদিন ২০০০টি মাটির চা কাপ তৈরি ও বাজারে সরবরাহ করছেন –
- একটি কাপ তৈরি খরচ: প্রায় ₹১ টাকা
- বিক্রয়মূল্য: ₹২ টাকা (অনেক জায়গায় ₹২.৫০ বা ₹৩ টাকাতেও বিক্রি হয়)
- প্রতিদিন লাভ: (₹২ – ₹১) × ২০০০ = ₹২০০০
- প্রতিমাসে লাভ (২৫ দিন কাজ করলে): ₹২০০০ × ২৫ = ₹৫০,০০০ টাকা
👉 এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, সঠিকভাবে বাজার ধরতে পারলে মাসে খুব সহজেই ৫০,০০০ টাকা বা তার বেশি ইনকাম করা যায়।
৪. বাজার ধরার উপায়
এই ব্যবসায় সফল হতে হলে শুধু কাপ বানালেই হবে না, সেটিকে সঠিক বাজারে পৌঁছে দিতে হবে।
(ক) স্থানীয় চা দোকান
- আপনার এলাকার সব চা দোকান, হোটেল, রেস্টুরেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
- কম দামে Bulk supply দিন, তাহলে তারা প্লাস্টিক বাদ দিয়ে মাটির কাপ কিনতে রাজি হবে।
(খ) অনলাইন মার্কেটপ্লেস
- Amazon, Flipkart, Meesho-তে মাটির কাপ বিক্রি করতে পারেন।
- এখন অনেকেই ঘরে সাজানোর জন্যও মাটির কাপ কিনে থাকেন।
(গ) বড় অর্ডার
- বিয়ে-শাদি, কর্পোরেট ইভেন্ট, মেলা বা অনুষ্ঠানে কুলহড়ের চাহিদা থাকে।
- এখানে একবারে হাজার হাজার কাপের অর্ডার পাওয়া যায়।
(ঘ) ব্র্যান্ডিং
- কাপের কোয়ালিটি ভালো রাখুন।
- চাইলে কাপের উপরে নাম বা লোগো ছাপিয়ে ব্র্যান্ডেড কাপ তৈরি করে দিতে পারেন। এতে ব্যবসার দাম ও মান দুটোই বাড়বে।
মাটির চা কাপ ব্যবসা শুধু আয়ের উৎস নয়, পরিবেশবান্ধব উদ্যোগও বটে। অল্প মূলধন, সামান্য জায়গা আর পরিশ্রম দিয়ে এই ব্যবসা শুরু করে মাসে ৫০,০০০ টাকা বা তারও বেশি রোজগার করা একেবারেই সম্ভব।
আজই যদি আপনি এই কাজে নামেন, তাহলে খুব শিগগিরই নিজের একটি ছোট ইউনিট দাঁড় করাতে পারবেন। ভবিষ্যতে বড় মাপের ফ্যাক্টরি বা সাপ্লাই চেইন গড়ে তুলতে পারবেন। তাই দেরি না করে এখনই মাটির কাপ ব্যবসায় হাত লাগান, নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করুন।