All Bank ATM Franchise 2025: এটিএম ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে মাসে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় করুন।

আজকের দিনে চাকরির পাশাপাশি বা ব্যবসার বিকল্প হিসেবে অনেকেই খুঁজছেন এমন কিছু উপায়, যেখানে নিয়মিত স্থায়ী আয় হবে। ঠিক সেই কারণেই এখন এটিএম ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবসা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বড় ব্যাংকগুলো সরাসরি এটিএম বসানোর বদলে প্রাইভেট কোম্পানি বা ভেন্ডরের মাধ্যমে ফ্র্যাঞ্চাইজি দিচ্ছে। আপনি যদি একটু পুঁজির বিনিয়োগ করতে পারেন এবং একটি ভালো লোকেশন পেয়ে যান, তবে মাসে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় করা একেবারেই সম্ভব।

চলুন ধাপে ধাপে এই ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

এটিএম ফ্র্যাঞ্চাইজি কী?

এটিএম ফ্র্যাঞ্চাইজি মানে হলো – আপনি একটি কোম্পানির অনুমতি নিয়ে তাদের এটিএম মেশিন আপনার জায়গায় বসাবেন এবং সেই মেশিন পরিচালনা করবেন। ব্যাংক গ্রাহকরা যখন টাকা তুলবেন বা জমা দেবেন, তখন প্রতি ট্রানজেকশনের জন্য আপনি কমিশন পাবেন।

উদাহরণস্বরূপ:

  • কেউ এটিএম থেকে টাকা তুললে (Cash Withdrawal) আপনাকে প্রতি ট্রানজেকশনে নির্দিষ্ট টাকা কমিশন দেওয়া হয়।
  • কেউ ব্যালেন্স চেক করলে বা মিনি স্টেটমেন্ট নিলেও তার জন্য আপনি কিছু টাকা আয় করতে পারেন।

এটিএম ফ্র্যাঞ্চাইজি দেওয়া কোম্পানিগুলো

ভারতের বিভিন্ন বড় কোম্পানি এখন এটিএম ফ্র্যাঞ্চাইজি দেয়। এর মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি হলো –

  1. Tata Indicash ATM
  2. Muthoot ATM
  3. India One ATM
  4. SBI / HDFC / ICICI-এর ভেন্ডর এটিএম

এইসব কোম্পানি সরাসরি ব্যাংকের সাথে যুক্ত থাকে এবং আপনাকে লিজ বা ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিতে এটিএম বসানোর অনুমতি দেয়।

এটিএম বসানোর জন্য কী কী দরকার?

লোকেশন:
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো লোকেশন। আপনার জায়গা যদি মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ বা ব্যস্ত রাস্তায় হয়, তবে গ্রাহক সংখ্যা বেশি হবে এবং আয়ও বাড়বে।

জায়গা:
এটিএম বসানোর জন্য সাধারণত ৫০-১০০ বর্গফুট জায়গা দরকার হয়। নিরাপত্তার কারণে রুমে মজবুত দরজা-জানালা থাকতে হবে।

বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট:
২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ও ব্রডব্যান্ড / 4G ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে।

কাগজপত্র:

  • আধার কার্ড
  • প্যান কার্ড
  • ভাড়ার চুক্তিপত্র / জমির কাগজ
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ডিটেলস

নিরাপত্তা:
সিসি ক্যামেরা, নিরাপত্তারক্ষী থাকলে কোম্পানির আস্থা বাড়বে।

এটিএম ফ্র্যাঞ্চাইজি নেওয়ার খরচ

বিভিন্ন কোম্পানির ক্ষেত্রে খরচ আলাদা হয়। সাধারণত –

  • সিকিউরিটি ডিপোজিট: ₹2 থেকে ₹5 লাখ (কোম্পানির ওপর নির্ভর করে ফেরতযোগ্য)
  • সেটআপ খরচ: ₹2 লাখ থেকে ₹3 লাখ (মেশিন, ইন্টারনেট, ইন্টেরিয়র ইত্যাদি)
  • মাসিক রক্ষণাবেক্ষণ: ₹5,000 – ₹10,000 (বিদ্যুৎ, নিরাপত্তা, ইত্যাদি)

 মোটামুটি ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে একটি এটিএম ফ্র্যাঞ্চাইজি নেওয়া যায়।

আয়ের হিসাব

এখন আসল প্রশ্ন হলো – মাসে কত আয় হবে?

  1. ক্যাশ উইথড্রয়াল:
    প্রতি লেনদেনে গড়ে ₹8 থেকে ₹15 কমিশন মেলে।

  2. ব্যালেন্স চেক বা মিনি স্টেটমেন্ট:
    প্রতি ট্রানজেকশনে ₹3 থেকে ₹5 কমিশন পাওয়া যায়।

 ধরা যাক প্রতিদিন ২০০ জন গ্রাহক এটিএম ব্যবহার করলেন –

  • 150 জন টাকা তুললেন × ₹10 = ₹1500 আয়
  • 50 জন ব্যালেন্স চেক করলেন × ₹3 = ₹150 আয়
    মোট দৈনিক আয়: ₹1650
     মাসে (৩০ দিন × 1650) = ₹49,500 আয়

যদি প্রতিদিন গ্রাহক সংখ্যা ৪০০-৫০০ হয়, তবে মাসে আয় ১ লাখ টাকার বেশি হতে পারে।

এটিএম ব্যবসার সুবিধা

✔️ নিয়মিত ও স্থায়ী আয়ের উৎস
✔️ কম ঝুঁকি – ব্যাংক ও কোম্পানি সব পরিচালনা করে
✔️ চাহিদা সবসময় থাকে – গ্রাহকরা সব জায়গায় এটিএম ব্যবহার করেন
✔️ বড় কোনো ডিগ্রির প্রয়োজন নেই
✔️ দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী প্যাসিভ ইনকাম

এটিএম ব্যবসার অসুবিধা

❌ শুরুতে বিনিয়োগ বেশি লাগে (৫-৭ লাখ টাকা)
❌ লোকেশন খারাপ হলে গ্রাহক কম আসবে
❌ বিদ্যুৎ/নেটওয়ার্ক সমস্যা হলে গ্রাহক বিরক্ত হবে
❌ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে চুরি বা ক্ষতির আশঙ্কা থাকে

এটিএম ফ্র্যাঞ্চাইজি নেওয়ার ধাপ

  1. পছন্দের কোম্পানির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান (যেমন Tata Indicash)।
  2. আবেদন ফর্ম পূরণ করুন।
  3. কাগজপত্র জমা দিন (KYC, জমির কাগজ, ভাড়ার চুক্তি ইত্যাদি)।
  4. কোম্পানি আপনার লোকেশন যাচাই করবে।
  5. চুক্তিপত্র সই হওয়ার পর মেশিন বসানো হবে।
  6. সেটআপ শেষে আপনি আয় শুরু করবেন।

কারা এই ব্যবসা করতে পারবেন?

  • যারা নিজের দোকান বা ফাঁকা জায়গা ব্যবহার করতে চান
  • যাদের স্থায়ী আয়ের উৎস খুঁজছেন
  • যাদের ব্যবসায় বিনিয়োগ করার মতো ৫-৭ লাখ টাকা আছে
  • গ্রামীণ ও শহুরে উভয় এলাকায় এই ব্যবসা লাভজনক

বাস্তব অভিজ্ঞতা

অনেকেই এখন এই ব্যবসার মাধ্যমে ভালো আয় করছেন। যেমন – জলপাইগুড়ির একজন ব্যবসায়ী ফুলবাড়ি মোড়ে একটি এটিএম বসিয়েছিলেন। প্রতিদিন প্রায় ৪০০-৫০০ মানুষ ব্যবহার করেন। তাঁর মাসিক আয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৯৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। আবার ছোট শহরে একজন প্রতিদিন ১৫০-২০০ গ্রাহক পেয়ে মাসে ৪৫-৫০ হাজার টাকা আয় করছেন।

এটিএম ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবসা আজকের দিনে অন্যতম জনপ্রিয় ও লাভজনক বিনিয়োগ। একবার মেশিন বসিয়ে দিলে এটি আপনার জন্য স্থায়ী আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়াবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে লোকেশনের ওপর। ভালো লোকেশন পেলে আপনি সহজেই মাসে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন।

মনে রাখবেন – আবেদন করার সময় শুধুমাত্র অফিসিয়াল কোম্পানির ওয়েবসাইট বা অথরাইজড এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করবেন। কোনো দালাল বা ভুয়া এজেন্সির কাছে টাকা দেবেন না।


নবীনতর পূর্বতন

Featured Video