আজকের আর্টিকেলে আমরা এই নতুন স্কিমের বিস্তারিত আলোচনা করব— এর সুবিধা, যোগ্যতা, বিনিয়োগের নিয়ম, এবং কেন এটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
অমৃত পেনশন যোজনা কী?
“অমৃত পেনশন যোজনা” হলো পোস্ট অফিসের একটি নতুন পেনশন স্কিম, যা ২০২৫ সালে চালু হয়েছে। এই স্কিমের অধীনে সাধারণ মানুষকে মাসিক কিছু অর্থ জমা দিতে হবে এবং ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন পাওয়া যাবে।
- এই স্কিম বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য।
- এতে অংশগ্রহণ করলে অবসরের পর নিয়মিত আয় নিশ্চিত হবে।
- এটি একপ্রকার সরকার অনুমোদিত সোশ্যাল সিকিউরিটি স্কিম।
প্রধান বৈশিষ্ট্য
এই স্কিমের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো:
- ন্যূনতম মাসিক জমা – মাত্র ৫০০ টাকা থেকে শুরু করা যাবে।
- সর্বোচ্চ জমা – মাসিক সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত জমা করা যাবে।
- বয়সসীমা – ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী ভারতীয় নাগরিক এই স্কিমে যোগ দিতে পারবেন।
- পেনশন শুরু হবে – ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর।
- পেনশনের পরিমাণ – জমা দেওয়া অর্থের ওপর ভিত্তি করে মাসিক ৩,০০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত পেনশন পাওয়া যাবে।
- যৌথ সুবিধা – পেনশন প্রাপকের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী/স্বামী আজীবন পেনশন পাবেন।
জমা দেওয়ার নিয়ম
- মাসিক, ত্রৈমাসিক, ছ’মাস অন্তর বা বার্ষিক ভিত্তিতে অর্থ জমা দেওয়া যাবে।
- অটো-ডেবিট সুবিধাও থাকবে, ফলে ব্যাংক/পোস্ট অফিস অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি টাকা কেটে যাবে।
- নির্দিষ্ট সময় টাকা জমা না হলে ছোট্ট জরিমানা ধার্য করা হবে।
কর ও সুবিধা
এই স্কিমে জমা দেওয়া অর্থের ওপর Income Tax Act, 80C অনুযায়ী করছাড় পাওয়া যাবে। ফলে বিনিয়োগ শুধু ভবিষ্যতের নিরাপত্তা দেবে না, বর্তমানেও ট্যাক্স বাঁচাতে সাহায্য করবে।
কেন এই স্কিম গুরুত্বপূর্ণ?
- অবসরে নিয়মিত আয়ের নিশ্চয়তা
- কম ঝুঁকি – পোস্ট অফিসের স্কিম হওয়ায় সরকারের নিশ্চয়তা থাকবে।
- গ্রামীণ মানুষের জন্য সহজলভ্য
- কর সুবিধা – ট্যাক্স সেভিংস
- ছোটো সঞ্চয় দিয়ে বড়ো লাভ – মাত্র ৫০০ টাকা দিয়েও শুরু করা যায়।
তুলনা: পুরনো স্কিম বনাম নতুন স্কিম
পোস্ট অফিসের আগে থেকেই কিছু জনপ্রিয় স্কিম রয়েছে যেমন—
- সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম (SCSS)
- মেয়েদের জন্য সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা
- ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (NSC)
- রেকারিং ডিপোজিট (RD)
- পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF)
কিন্তু নতুন অমৃত পেনশন যোজনা আলাদা, কারণ এটি অবসরের পর আজীবন আয়ের নিশ্চয়তা দেয়।
উদাহরণ হিসাব
ধরা যাক একজন ব্যক্তি ৩০ বছর বয়সে এই স্কিমে যোগ দিলেন এবং মাসিক ১০০০ টাকা জমা করতে লাগলেন।
- ৩০ বছর থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত জমা হবে মোট ৩০ বছর × ১২ মাস × ১০০০ = ৩,৬০,০০০ টাকা।
- ৬০ বছর থেকে তিনি মাসিক প্রায় ৫,০০০ টাকা পেনশন পেতে শুরু করবেন।
- এই পেনশন আজীবন চলবে এবং মৃত্যুর পর স্ত্রী/স্বামীও সুবিধা পাবেন।
নতুন স্কিমের সুবিধাভোগীরা কারা হতে পারেন?
- ছোট চাকরি করেন যাদের বেতন কম।
- গ্রামীণ কৃষক বা দিনমজুর যাদের হাতে নিয়মিত বেশি টাকা থাকে না।
- ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
- যারা অবসরের পর নির্ভরযোগ্য আয়ের নিশ্চয়তা চান।
কিভাবে আবেদন করবেন?
- নিকটবর্তী পোস্ট অফিসে গিয়ে ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে।
- পরিচয়পত্র (আধার, ভোটার কার্ড) ও ঠিকানার প্রমাণ জমা দিতে হবে।
- একটি পোস্ট অফিস সেভিংস অ্যাকাউন্ট থাকা আবশ্যক।
- প্রথম কিস্তি জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাকাউন্ট চালু হবে।
পোস্ট অফিসের নতুন অমৃত পেনশন যোজনা সাধারণ মানুষের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ছোটো সঞ্চয়কে কাজে লাগিয়ে অবসরের পর নিয়মিত আয়ের সুযোগ করে দেবে এই স্কিম। চাকরিজীবী হোন বা ব্যবসায়ী, এমনকি কৃষক বা দিনমজুর— সবার জন্যই এই স্কিম কার্যকর হতে পারে।
তাই আজ থেকেই নিকটবর্তী পোস্ট অফিসে যোগাযোগ করে এই স্কিমে যোগদান করলে ভবিষ্যতের জন্য একটি মজবুত আর্থিক ভিত্তি গড়ে তোলা সম্ভব।