তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হল ডঃ বি.আর. আম্বেদকর স্কলারশিপ (Dr. B. R. Ambedkar Scholarship)। সংবিধানের রচয়িতা ও সমাজ সংস্কারক ডঃ ভীমরাও আম্বেদকরের নামে এই বৃত্তি চালু করা হয়েছে যাতে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। এবার এই স্কলারশিপের আওতায় শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত অর্থসাহায্য পাবেন।
ডঃ আম্বেদকর স্কলারশিপ কী?
ডঃ আম্বেদকর স্কলারশিপ মূলত তফশিলি জাতি (SC), তফশিলি উপজাতি (ST), অন্যান্য অনগ্রসর জাতি (OBC), এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল সাধারণ (EWS) শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করা হয়েছে। এই স্কিমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্কুল স্তর থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি পেতে পারেন।
এর মূল উদ্দেশ্য হলো—
- দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া।
- তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করা।
- উচ্চশিক্ষায় পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলিকে সুযোগ করে দেওয়া।
- আম্বেদকরের শিক্ষাদর্শ বাস্তবায়ন করা।
কত টাকা পাবেন শিক্ষার্থীরা?
সাম্প্রতিক ঘোষণায় বলা হয়েছে, এবার থেকে এই স্কলারশিপের আওতায় প্রতি শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত পাবে।
অর্থাৎ—
- মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর ১০,০০০–১৫,000 টাকা পর্যন্ত পাবেন।
- গ্র্যাজুয়েশন ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন স্তরে শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত পাবেন।
- প্রফেশনাল কোর্স (ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল, ম্যানেজমেন্ট, ল’ ইত্যাদি) পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বিশেষ অগ্রাধিকার পাবেন।
কারা আবেদন করতে পারবেন?
এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে গেলে কিছু শর্ত মানতে হবে। যেমন—
- আবেদনকারী অবশ্যই ভারতের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- SC, ST, OBC অথবা EWS শ্রেণীর হতে হবে।
- পরিবারের বার্ষিক আয় নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকতে হবে (সাধারণত ২.৫ লাখ থেকে ৪.৫ লাখ টাকার মধ্যে)।
- আবেদনকারীর পূর্ববর্তী পরীক্ষায় ন্যূনতম ৫০%–৬০% নম্বর থাকতে হবে।
- একসঙ্গে অন্য বড় কোনো সরকারি স্কলারশিপ নেওয়া যাবে না।
কোন কোন ডকুমেন্ট লাগবে?
আবেদন করার সময় শিক্ষার্থীদের নিম্নলিখিত নথি জমা দিতে হবে—
- আধার কার্ড
- জাতিগত সনদপত্র (Caste Certificate)
- আয়ের সনদ (Income Certificate)
- বসবাসের সনদ (Domicile Certificate)
- সর্বশেষ পরীক্ষার মার্কশিট
- ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ডিটেলস (IFSC সহ)
- পাসপোর্ট সাইজ ফটো
আবেদন প্রক্রিয়া
ডঃ আম্বেদকর স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ফর্ম পূরণ করতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ সময়সীমা
- আবেদন শুরু হয়েছে: ১৫ আগস্ট ২০২৫
- আবেদন গ্রহণের শেষ তারিখ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৬
অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আবেদন করতে হবে, নইলে সুযোগ হাতছাড়া হবে।
ধাপে ধাপে আবেদন করার নিয়মঃ
- প্রথমে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান 👉 saralharyana.gov.in
- সেখানে New Registration অপশন সিলেক্ট করুন।
- নিজের সমস্ত তথ্য যেমন— নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা, ক্যাটাগরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ইত্যাদি সঠিকভাবে লিখুন।
- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করুন।
- ফর্ম যাচাই করে Submit করুন।
- সফলভাবে জমা দেওয়ার পর একটি Acknowledgement Slip পাওয়া যাবে, যা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।
টাকা কিভাবে দেওয়া হবে?
আবেদনকারীর সমস্ত তথ্য যাচাই করার পর স্কলারশিপের টাকা Direct Benefit Transfer (DBT) পদ্ধতিতে সরাসরি শিক্ষার্থীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে।
কেন এই স্কলারশিপ গুরুত্বপূর্ণ?
ডঃ আম্বেদকর স্কলারশিপ কেবল একটি আর্থিক সাহায্য নয়, বরং এটি একটি সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার।
- গ্রামের দরিদ্র ছাত্রছাত্রীরা যাতে কলেজে পড়তে পারে।
- মেয়েরা যাতে পড়াশোনায় পিছিয়ে না পড়ে।
- প্রফেশনাল কোর্সে ভর্তি হতে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীরা যাতে ঋণের বোঝা ছাড়াই পড়াশোনা করতে পারে।
- উচ্চশিক্ষায় সমান সুযোগ তৈরি হয়।
রাজ্যভেদে আলাদা সুবিধা
অনেক রাজ্য সরকার নিজেদের তরফ থেকেও আলাদা ভাবে ডঃ আম্বেদকর স্কলারশিপ চালু করেছে। যেমন—
- পশ্চিমবঙ্গ সরকার SC, ST, OBC পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ সহায়তা দেয়।
- পাঞ্জাব সরকার 'ডঃ আম্বেদকর পোস্ট-ম্যাট্রিক স্কলারশিপ' চালু করেছে।
- হরিয়ানা, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, বিহার— প্রতিটি রাজ্যেই বিশেষ কোটা ও বাড়তি অর্থসাহায্য দেওয়া হয়।
ডঃ বি.আর. আম্বেদকর স্কলারশিপ শিক্ষার্থীদের জীবনে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়। যেসব পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য নেই, তারাও এই বৃত্তির সাহায্যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এবার ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের আরও উৎসাহ দেবে।
আম্বেদকর বলেছিলেন— “শিক্ষিত হও, সংগঠিত হও, সংগ্রাম করো।” এই স্কলারশিপ সেই উক্তিকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে। তাই যেসব শিক্ষার্থী যোগ্য, তারা যেন দ্রুত আবেদন করে নিজের স্বপ্নপূরণের পথে একধাপ এগিয়ে যান।