ডিজিটাল সার্টিফিকেটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি হারানোর ভয় নেই এবং সর্বক্ষণ অনলাইনে যাচাইযোগ্য। প্রতিটি সার্টিফিকেটে একটি ইউনিক অ্যাপ্লিকেশন নম্বর ও QR কোড থাকে, যার মাধ্যমে সহজেই এর সত্যতা প্রমাণ করা যায়। ফলে সরকারি চাকরি, ভর্তি, স্কলারশিপ কিংবা অন্য যেকোনো কাজে এই নতুন ডিজিটাল কপি অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য ও ব্যবহারযোগ্য।
কেন পুরনো সার্টিফিকেট ডিজিটাল করা জরুরি?
হাতে লেখা সার্টিফিকেট বহু বছর ধরে ব্যবহার হলেও এখন অনেক জায়গায় আর সেগুলো গ্রহণ করা হচ্ছে না। চাকরি বা উচ্চশিক্ষার আবেদন করার সময় অনলাইন ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক হয়েছে, যেখানে হাতে লেখা কাগজ যাচাই করা যায় না। আবার অনেক সময় পুরনো কাগজ ছিঁড়ে যায়, হারিয়ে যায় অথবা অফিসিয়ালি ট্রেস করা সম্ভব হয় না। ডিজিটাল সার্টিফিকেট সবসময় সরকারি সার্ভারে সেভ থাকে, তাই হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই। অনলাইন থেকেই বারবার ডাউনলোড করা যায়। একবার ডিজিটাল হলে যেকোনো জায়গায় এর কপি ব্যবহার করা সম্ভব।
আবেদন করার আগে যা যা প্রস্তুত রাখতে হবে
আবেদন শুরু করার আগে কয়েকটি জিনিস অবশ্যই হাতের কাছে রাখতে হবে। যেমন –
- পুরনো হাতে লেখা সার্টিফিকেট (অরিজিনাল কপি ও স্ক্যান কপি)
- আধার কার্ড (এখন বাধ্যতামূলক)
- সাম্প্রতিক রঙিন পাসপোর্ট সাইজ ছবি (JPEG ফরম্যাট, ৫০KB-এর মধ্যে)
- পুরনো সার্টিফিকেটের স্ক্যান কপি (JPEG বা PDF, ১০০KB-এর মধ্যে পরিষ্কারভাবে স্ক্যান করা)
- সক্রিয় মোবাইল নম্বর (OTP ভেরিফিকেশনের জন্য)
এই ডকুমেন্টগুলো আগে থেকে প্রস্তুত রাখলে আবেদন প্রক্রিয়ার সময় কোনো ঝামেলা হবে না।
ধাপে ধাপে আবেদন প্রক্রিয়া
পুরো প্রক্রিয়াটি খুব বেশি জটিল নয়। তবে প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে করলে দ্রুত সার্টিফিকেট ডিজিটাল হয়ে যায়।
১) সরকারি ওয়েবসাইটে প্রবেশ
প্রথমে ব্রাউজার খুলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অফিসিয়াল কাস্ট সার্টিফিকেট পোর্টালে যেতে হবে:
👉 https://castcertificatewb.gov.in
এখান থেকেই পুরো আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
২) ব্যাকলগ সার্টিফিকেট অপশন নির্বাচন
হোমপেজে প্রবেশ করার পর আপনি “Backlog Certificate” নামের একটি অপশন দেখতে পাবেন। এই অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর ড্রপডাউন মেনু থেকে “Apply for Digitized Certificate for SC/ST/OBC” সিলেক্ট করতে হবে। এখানেই মূল প্রক্রিয়া শুরু হবে।
৩) ফর্ম পূরণ করা
এবার আসবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ—ফর্ম পূরণ। এখানে আপনাকে সঠিকভাবে প্রতিটি তথ্য লিখতে হবে, যেমন:
- আপনার পুরনো সার্টিফিকেট নম্বর এবং ইস্যু করার তারিখ
- ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষের নাম (যেমন BDO, SDO বা অন্য কোনো অফিসার)
- আপনার কাস্ট (SC, ST, OBC-A বা OBC-B) এবং সাব-কাস্ট
- পুরো নাম, বাবার নাম, জন্মতারিখ, লিঙ্গ
- আধার নম্বর, মোবাইল নম্বর, ঠিকানা (জেলা, মহকুমা, থানা, পোস্ট অফিস, ব্লক, গ্রাম পঞ্চায়েত, পিন কোড)
বিশেষ করে OBC প্রার্থীদের জন্য আলাদা অপশন রয়েছে। তারা চাইলে সরাসরি “Apply for OBC” অপশন থেকেও আবেদন করতে পারেন, যেখানে পুরনো নম্বরটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিজিটাল হয়ে যায়। তবে SC এবং ST প্রার্থীদের অবশ্যই “Backlog Certificate” রুট ব্যবহার করতে হবে।
৪) নথি আপলোড
ফর্ম পূরণের পর ডকুমেন্ট আপলোড করতে হবে। এখানে মূলত দুটি জিনিস আবশ্যক—পুরনো সার্টিফিকেটের স্ক্যান কপি এবং আপনার ছবি। ফাইল সাইজ নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে না হলে আপলোড হবে না, তাই আগে থেকেই ছবি ও স্ক্যান করা কপিকে কম সাইজে নিয়ে আসতে হবে।
৫) আবেদন জমা ও অ্যাকনলেজমেন্ট
সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ এবং ডকুমেন্ট আপলোডের পর ক্যাপচা কোড দিয়ে “Submit” বাটনে ক্লিক করতে হবে। সফলভাবে জমা হলে সিস্টেম একটি অ্যাপ্লিকেশন নম্বর জেনারেট করবে। এই নম্বরটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর মাধ্যমেই পরে স্ট্যাটাস চেক করা যায়। অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ অবশ্যই ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে রাখুন।
৬) স্ট্যাটাস চেক ও সার্টিফিকেট ডাউনলোড
আবেদন জমা দেওয়ার পর যেকোনো সময় আপনার আবেদনটির বর্তমান অবস্থা দেখতে পারবেন। এজন্য আবার “Backlog Certificate” মেনুতে গিয়ে “Check Application Status for Digitized Certificate” সিলেক্ট করুন এবং অ্যাপ্লিকেশন নম্বর লিখুন। এখানে আপনার স্ট্যাটাস দেখা যাবে—Pending, Rejected বা Approved।
যদি আবেদন অনুমোদিত হয়, তাহলে “SC/ST” অপশনে গিয়ে “Download Certificate” থেকে সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন। এই সার্টিফিকেটটি হবে সম্পূর্ণ ডিজিটাল, যার সাথে QR কোড এবং ইউনিক নম্বর থাকবে।
মনে রাখাবেন
ডিজিটাল কাস্ট সার্টিফিকেট এখন কেবল একটি নথি নয়, এটি আপনার পরিচয়ের একটি স্থায়ী রেকর্ড যা ভবিষ্যতে যেকোনো সময় কাজে লাগবে। চাকরি, শিক্ষা, স্কলারশিপ বা অন্য যেকোনো সরকারি কাজে বারবার হাতে লেখা সার্টিফিকেট নিয়ে দৌড়াদৌড়ি না করে একবার ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তরিত করলেই আপনি আজীবন নিশ্চিন্ত থাকবেন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই উদ্যোগের ফলে এখন সাধারণ মানুষও সহজে ঘরে বসে নিজের পুরনো হাতে লেখা SC, ST বা OBC সার্টিফিকেটকে কয়েক মিনিটেই ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তরিত করতে পারছে। তাই দেরি না করে আজই আপনার সার্টিফিকেটকে ডিজিটাল করুন এবং আধুনিক সিস্টেমের সাথে নিজেকে যুক্ত করুন।