আধার কার্ডে বাধ্যতামূলক নিয়ম ও ভুল সংশোধন – যা জানা খুব জরুরি। কি কি ভুল থাকলে আপনি নাগরিকতা হারিয়ে ফেলবেন।

ভারতে আধার কার্ড এখন নাগরিক জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়পত্র। প্রায় সব সরকারি ও বেসরকারি কাজেই আধার প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেকেই জানেন না আসলে কোথায় আধার বাধ্যতামূলক, কোথায় বিকল্প নথি ব্যবহার করা যায়, আর যদি আধারে কোনো ভুল পাওয়া যায় তখন কী করতে হবে। এই আর্টিকেলে সহজ ভাষায় সেই সব তথ্য তুলে ধরা হলো।

আধার কোথায় বাধ্যতামূলক

১. ব্যাংক ও আর্থিক লেনদেনে

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, বীমা, পেনশন তোলা বা যেকোনো আর্থিক লেনদেনে আধার KYC প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাধ্যতামূলক। যদি প্রাথমিকভাবে আধার না থাকে তবে ভোটার কার্ড, প্যান বা ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে কাজ শুরু করা যায়, কিন্তু পরবর্তীতে আধার জমা দেওয়া না হলে অ্যাকাউন্ট কার্যকর থাকবে না।

২. আয়কর ও প্যান কার্ড

আধারকে প্যান কার্ডের সঙ্গে লিঙ্ক করা এখন আইনি বাধ্যবাধকতা। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে লিঙ্ক না করলে প্যান বাতিল হয়ে যায় এবং আয়কর রিটার্ন দাখিল করা যায় না। ফলে আর্থিক জীবনে বড় সমস্যায় পড়তে হয়।

৩. সরকারি ভর্তুকি ও কল্যাণ প্রকল্প

এলপিজি গ্যাস, স্কলারশিপ, রেশন, পেনশন ইত্যাদি সরাসরি ভর্তুকি (DBT) পাওয়ার জন্য আধার অবশ্যই লাগবে। এর মাধ্যমে ভুয়া সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে প্রকৃত মানুষ উপকৃত হন। তাই এসব প্রকল্পে আধার ছাড়া সুবিধা পাওয়া সম্ভব নয়।

৪. ভোটার তালিকা ও বাসস্থানের প্রমাণ

অনেকে ভাবেন ভোটার তালিকায় নাম তুলতে আধার বাধ্যতামূলক। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট পরিষ্কার জানিয়েছে যে আধার বা রেশন কার্ডকে বাসস্থানের একমাত্র প্রমাণ হিসেবে ধরা যাবে না। এখানে বিদ্যুৎ বিল, ভাড়া চুক্তি, পাসপোর্ট ইত্যাদি নথিও গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ ভোটার তালিকায় আধার জমা দেওয়া যায়, কিন্তু তা বাধ্যতামূলক নয়।

আধার কার্ডে ভুল পাওয়া গেলে কী করবেন

অনেক সময় দেখা যায় আধার কার্ডে নামের বানান, জন্মতারিখ, ঠিকানা বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংক্রান্ত ভুল রয়ে গেছে। এই ক্ষেত্রে করণীয়:

  1. অনলাইনে সংশোধন:

    • UIDAI ওয়েবসাইটে লগইন করে ‘Update Aadhaar’ সেকশনে গিয়ে নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা বা লিঙ্গ সংশোধন করা যায়।
    • প্রয়োজনীয় নথি (যেমন জন্মসনদ, স্কুল সার্টিফিকেট, ভোটার কার্ড ইত্যাদি) স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।
    • অনলাইন আপডেটের পর URN (Update Request Number) দিয়ে স্ট্যাটাস চেক করা যায়।
  2. অফলাইনে সংশোধন:

    • নিকটস্থ আধার সেবা কেন্দ্র, ব্যাংক বা পোস্ট অফিসে গিয়ে ফর্ম পূরণ করে সংশোধন করা যায়।
    • মোবাইল নম্বর বা বায়োমেট্রিক তথ্য সংশোধনের জন্য অবশ্যই অফলাইন কেন্দ্রে যেতে হয়।
    • সংশোধনের জন্য ₹২৫–₹৫০ পর্যন্ত ফি লাগতে পারে।
  3. জন্মতারিখ বা বায়োমেট্রিক আপডেট:

    • জন্মতারিখ পরিবর্তন করতে বৈধ সরকারি জন্ম প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
    • UIDAI জানিয়েছে বারবার জন্মতারিখ বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট বদলানো যাবে না, এতে সীমাবদ্ধতা থাকবে।
    • বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেললে এখন iris স্ক্যান ব্যবহার করা হবে।

আধার নিরাপত্তা ও নতুন পরিবর্তন

  1. QR-কোড ব্যবহার:
    আধারের ফটোকপি জমা দেওয়ার ঝামেলা কমাতে UIDAI নতুন QR-কোড চালু করছে। এর মাধ্যমে কেবল QR স্ক্যান করেই নাম, জন্মতারিখ, ছবি ইত্যাদি যাচাই করা যাবে।

  2. অনলাইন আপডেটের সুযোগ:
    UIDAI ঘোষণা করেছে যে নভেম্বর ২০২৫ থেকে অধিকাংশ আধার সংশোধন মোবাইল বা ওয়েব প্ল্যাটফর্ম থেকেই করা যাবে, ফলে অফলাইন কেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন কমবে।

  3. অন্য পরিচয়পত্রের গুরুত্ব:
    যদিও আধার অনেক ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক, তবুও নাগরিকদের উচিত ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো অন্যান্য পরিচয়পত্রও প্রস্তুত রাখা। কারণ কিছু ক্ষেত্রে (যেমন বাসস্থান প্রমাণ) আধার একাই যথেষ্ট নয়।

ভারতে আধার এখন প্রায় প্রতিটি নাগরিকের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ব্যাংক, আয়কর, সরকারি ভর্তুকি – এসব ক্ষেত্রে আধার ছাড়া কাজই হয় না। তবে ভোটার তালিকা বা বাসস্থানের প্রমাণের মতো ক্ষেত্রে আধার বাধ্যতামূলক নয়, বিকল্প নথিও গ্রহণযোগ্য। আর যদি আধার কার্ডে কোনো ভুল থেকে যায় তবে তা অনলাইন বা অফলাইনে দ্রুত সংশোধন করা উচিত।

সরকার এখন আধার ব্যবস্থাকে আরও নিরাপদ করতে QR-কোড, iris স্ক্যান ও অনলাইন আপডেট চালু করছে। তাই নাগরিক হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো আধার সবসময় আপডেট রাখা, এবং সঠিক তথ্য দিয়ে ব্যবহার করা। আধার আজ শুধু একটি পরিচয়পত্র নয়, বরং সরকারি সুবিধা ও আর্থিক নিরাপত্তার অন্যতম ভিত্তি।

নবীনতর পূর্বতন

Featured Video